আমিন সাদিঃ কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. হান্নান মিয়া ও অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচালক কিশোরগঞ্জের জামাই ড.মোঃ আতাউর রহমান দু’জনেই শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
জানা যায়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (প্রশাসন) আ স ম হাসান আল আমিন স্বাক্ষরিত গত ২৮ জুনের এক পত্রে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মোঃ হান্নান মিয়াকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের শুদ্ধাচার পুরস্কার হিসেবে এক মাসের (জুন ২০২০) মূল বেতনের সমপরিমান অর্থ ব্যয় মঞ্জুরী প্রদান করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. হান্নান মিয়া গত বছরের ২৯ মে আগাঁরগাঁওয়ে অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মহাপরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে মহা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পরেই অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর কাজে হাত দেন। দেশের প্রত্নস্থল পরিদর্শন করে সংরক্ষিত করার উদ্যোগ নেন।
মো. হান্নান মিয়া কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার মৌটুপী কর্তাবাড়ীর হাজী আব্দুল আহাদ ও আম্বিয়া খাতুনের গর্বিত সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে বিএসএস (অনার্স) ও এমএসএস পাশ করেন। যুক্তরাজ্যের ওয়েষ্ট লন্ডন ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট এ পিজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে মো. হান্নান মিয়া গাইবান্ধা জেলার সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বগুড়ায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ও শেরপুর জেলার আরডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি শাল্লা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট এবং জকিগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির উপ-পরিচালকসহ সর্বশেষ বিয়াম ফাউন্ডেশনের পরিচালক হিসেবে চাকুরী করেছেন।
সুলেখক মো. হান্নান মিয়া ফৌজদারী মামলা পরিচালনা ও পদ্ধতি, ভূমি আইন প্রয়োগ-পদ্ধতি, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যপদ্ধতি, মুক্তির নৈবেদ্য (মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে রচিত উপন্যাস) গ্রন্থের প্রণেতা।
অপর দিকে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনাধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক কিশোরগঞ্জের জামাই ড. মোঃ আতাউর রহমানকে শুদ্ধাচার বাচাই কমিটির গত ১১ জুনের তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব মো. হান্নান মিয়া স্বাক্ষরিত গত ১৭ জুনের এক পত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
ড.মো.আতাউর রহমান পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামে ১৯৭৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। মোহাম্মদ আলী সরকার মাস্টার তার পিতা এবং জোসনা বেগম তার মাতা। বনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ড. রহমানের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। তিনি পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে এসএসসি এবং পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে ১৯৯২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে বিএ (অনার্স) এবং ১৯৯৬ সালে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মুুসলিম শিল্পকলা ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে রাজশাহীতে অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর ২০০৩ সালে ময়মনসিংহ স্টেট ইনস্টিটিউটে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ময়মনসিয়হ ক্যাম্পাসের ইসলামের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগ দেন। ড. রহমান ২০০৭ সালে বাংলাদেশের একমাত্র সাংষ্কৃতিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং সেখানে ২০১১ সালের ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালেন ২১ এপ্রিল সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ২০১২ সালের ১৩ মে থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এর পরে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর এ তিনি চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ,আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন। এবং অদ্যবধি উক্ত পদে কর্মরত আছেন। তিনি গত দুইযুগ ধরে গবেষণা কাজে প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গমন করেন এবং গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে সার্ক সম্মেলনে অংশ্রগ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের ওপর দীর্ঘ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এছাড়া ২০১৩ সালের নভেম্বরে UNESCO জাপানের তত্ত্বাবধানে জাপানের Nara তে Heritage Managemant এর উপর একমাসের Training এ অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ২০১৫ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে একমাস ট্রেনিং গ্রহণ করেন। দেশে বিদেশে তাঁর ২৫ টিরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে এবং এযাবৎ ২০ টি গবেষণা গ্রন্থের সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তন্মধ্যে Buddist Heritage of Bangladesh,Mosque of Bangladesh, গাহি সাম্যের গান স্মারকগ্রন্থ, ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদ স্মরকগ্রন্থ, বাংলাদেশের প্রত্নচর্চা- ৫,৬,৭,এবং প্রত্নবার্তা ১,২,৩ ইত্যাদি। এছাড়া তার তিনটি প্রত্নতত্ত্বের গবেষনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পান্ডুলিপি বই আকারে ছাপার অপেক্ষা রয়েছে। তিনি এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশে, বাংলা একাডেমী,পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ,বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি ,ময়মনসিয়হ মুসলিম ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ইতিহাস একাডেমির জীবন সদস্য। উল্লেখ্য যে তিনি প্রায় এক দশক ধরে একটি বিখ্যাত রিসার্চ অরগানাইজেশন- এশিয়ান বিজনেস কনসর্টিয়াম এর অবৈতনিক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি কিশোরগঞ্জের অধ্যাপক মোজাফফর হোসেন খান ও আজিজা খাতুনের তৃতীয় কন্যা অধ্যাপিকা মাহমুদা বেগম স্বপ্না বিএসএস (অনার্স) এমবিএ(রাবি) এর সঙ্গে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের এক পুত্র মাশার্ল আর্ট অথৈ মাহমুদ ও এক কন্যা মাশার্ল আর্ট রাতা রহমান।