করো’না ও’য়ার্ড থে’কে বের হয়ে বাবা নিজেই ৬ বার গি’য়েছেন স্টা’ফদের কাছে অক্সিজেন নেওয়ার জন্য; কিন্তু এর পরও তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়নি।
পরে আ’তঙ্কিত হয়ে বাবা আমকে ফোন করেন। আমি গি’য়ে অক্সিজেনসহ সব কিছু প্রস্তুত করতে থাকি। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।
এরই মধ্যে বা’বা অ’ক্সিজেনের অভাবে স্ট্রোক করেন। দ্রুত অক্সিজেন সেসুরেশন কমতে থাকে তার এবং একপর্যায়ে মা’রা যান…’— কথাগুলো বলেই কা’ন্নায় ভেঙে পড়েন রাজধানীর একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের এক ছা’ত্রী।
সরকারি মে’ডিকেল ক’লেজ হাসপাতা’লের বি’রুদ্ধে কথা বলে পড়ালেখা নিয়ে পরবর্তীকালে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন, এমন আশ’ঙ্কায় নিজের নাম প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
জানা গেছে, ওই ছা’ত্রীর বাবা মোশাররফ হোসেন (৬২) আগে থেকেই হার্টের রোগী ছিলেন। গত রোজার ঈদের দিন থেকে জ্বরসহ করো’নাভাই’রাসের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে তার। পরিবারের পক্ষ থেকে করো’নাভাই’রাসের পরীক্ষা করানো হয়।
গত বুধবার করো’না শ’নাক্ত হলে ওইদিনই রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতা’লে ভর্তি করা হয় মোশাররফ হোসেনকে।ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তার মে’য়ে জানান, করো’না শনাক্ত হওয়ার পর আমা’র বাবা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন।
আগে থেকে কি’ছু জ’টিলতা থাকার পরও তার শারীরিক অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আমাকে ফোন করে জানান, তার শ্বা’স নিতে সমস্যা হচ্ছে।
তার প্রচণ্ড মা’থাব্যথা ছিল; কিন্তু ৬ বার গিয়ে অক্সিজেনের কথা বলার পরও কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি— এ কথা শুনে মে’য়ে নিজেই মাস্ক পরে বাসা থেকে হাসপাতা’লে ছুটে যান।
ওই ছা’ত্রী বলেন, আ’মি নিজে ২০ লিটারের দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার টেনে নিয়ে যাই বাবার কাছে; কিন্তু অ’ক্সিজেন বা’বার মুখে যিনি দেবেন তিনি ছিলেন না। অন্যরা অনেক চেষ্টা করেও সেট করতে পারলেন না।
এর মধ্যে প্রায় ঘ’ণ্টাখানেক পা’র হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বাবার এক পাশ অবস হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারছিলাম বাবা স্ট্রোক করেছেন। এ সময় অ’ক্সিজেন সেসুরেশন দ্রুত নেমে যেতে থাকে।
আমি অন্যদের ডাকি। শে’ষ মু’হূর্তে অবশ্য অক্সিজেন লাগানো হয়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কারণ অ’ক্সিজেন সেসুরেশন ৬০-এর নিচে নেমে গেছে।
আমি বুঝতে পা’রছিলাম সব শে’ষ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে; কিন্তু চেষ্টা করছিলাম বাবাকে শেষ মুহূর্তে একটু অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে, যাতে অন্তত একটু শান্তিতে মা’রা যেতে পারেন— কথাগুলো বলে কা’ন্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
এক প’র্যায়ে রা’ত সাড়ে তিনটার দিকে মা’রা যান তার বাবা। গতকাল মঙ্গলবার সরকার নির্ধারিত একটি কবরস্থানে দা’ফন করা হয়েছে মোশাররফ হোসেনকে।মোশাররফ হোসেনের মে’য়ে বলেন, করো’নায় আ’ক্রান্ত রোগীর সেবায় চিকিৎসক, নার্স অনেক পরিশ্রম করছেন।
তাদের ধন্যবাদ। আ’বার এর উ’ল্টো চিত্রও আছে। আমা’র বাবার ক্ষেত্রে যেটা হলো তার দায় কে নেবে? করো’না ওয়ার্ডে অক্সিজেন লাগানোর লোক থাকবে না— এটা কেমন কথা? ৬ বার গিয়েও একটু অ’ক্সিজেন পেলেন না আমা’র বাবা।
এখানে যা হ’চ্ছে, সে’টা তো আমি গিয়েই দেখলাম।তিনি বলেন, আমি নিজে মেডিকেল শিক্ষার্থী তাই হয়তো আমি অ’ন্যদের মতো সিনক্রিয়েট করতে পারব না। তাই বিচারটা আল্লাহর কাছে দিলাম।
আমি নি’জেও এক সময় মা’নুষকে চিকিৎসা দেব; কিন্তু আমা’র বাবা এক প্রকার চিকিৎসা না পেয়েই মা’রা গেলেন। সন্তান হিসেবে এর চেয়ে ক’ষ্টের আর কিছু আমা’র জীবনে আসবে না।