ই’সলাম সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। মানবজীবনের সব সমস্যার সার্থক সমাধান রয়েছে ইসলামে। সমাজে ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় আল্লাহ মানব জাতির কল্যাণ বাতলে দিয়েছেন। ইসলামে দান-খয়রাতের নানা মাত্রিক ধরন রয়েছে। সাদাকা ইফাক ফী সাবিলিল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। সব ধরনের দানই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়। দানকে ফরজ করে বিধান চালু হয় হিজরতের পর। একে বলা হয় যাকাত।
যা’কাত শব্দের অর্থ পবিত্রতা ও বৃ’দ্ধি। যাকাতের নিসাব ও ফিতরার নিসাব সমান হলেও ধন-সম্পদের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যাকাতের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হলে সেই সাহিবে নিসাবের উপরে যাকাত বা’ধ্যতামূলক হয়ে যায়। শতকরা আড়াইভাগ হিসাব করে যাকাত দেওয়া, কিন্তু ফিতরার ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী হবার প্রয়োজন হয় না বরং ঈদ-উল-ফিতরের দিন সকালে নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদের অধিকারী হলেই তার ও’পর ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়।জাকাত বিকাশ বা পরিবহনে পাঠালে খরচ কে বহন করবে?প্রশ্ন : জাকাতের হকদার বেশি কারা? কখনো জাকাতের মাল অন্য এলাকায় পাঠাতে চাইলে, পরিবহন খরচ কে বহন করবে?
জা’কাতের টাকা থেকে পরিবহন ভাড়া বা বিকাশের খরচ দেয়া জায়েয হবে?উত্তর : জাকাত অ’সহায় গরিবের হক। যার ও’পর জাকাত ফরজ হয় তার কর্তব্য হচ্ছে, অ’সহায় গরিবসহ জাকাতের নির্ধারিত খাতে তা ব্যয় করা। জাকাত আদা’য়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হলো নিজের এলাকায় উপযুক্তদের মাঝে খরচ করা।
নি’জ এলাকার বাইরে জাকাত পাঠানোর বিধান :হজরত আবু জুহাইফা (রা.) বলেন, আমাদের এলাকায় রাসূল (সা.) এর তরফ থেকে জাকাত আদায়কারী আসলেন। আমাদের এলাকার ধনীদের থেকে জাকাত নিয়ে, এলাকার গরিবদের মাঝে বন্টন করলেন।’ (সুনানে তিরমিজি-৬৪৯)। এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, এলাকার জাকাত, এলাকার গরিবদের মাঝেই বন্টন করতে হয়। তাই জাকাত নিজ এলাকায় খরচ না করে অন্যত্র পাঠানো মাকরূহ। তবে যদি অন্য এলাকার মানুষ, নিজ এলাকার চেয়ে বেশি মুখাপেক্ষী হয় বা বেশি নেককার হয় বা সেখানে জাকাতদাতার কোনো নিকট-আত্মীয় থাকে তাহলে সেখানে জাকাতের মাল পাঠাতে কোনো সমস্যা নেই।
এ’বং শরীয়তের দৃষ্টিতে এটা মাকরূহও হবে না। ( রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ৩৫৫, আলা মা’রাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-৭২২, দরসে তিরমিজি, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৪৭৪, আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-২৪৯)।বিকাশের মাধ্যমে জাকাত দিলে বিকাশের খরচ কে বহন করবে?
বি’কাশের মাধ্যমে কেউ জাকাত আদায় করে থাকলে, বিকাশ চার্জ জাকাত দাতাকেই বহন করতে হবে। অন্যথায় বিকাশ থেকে যে পরিমান চার্জ কে’টে রাখা হবে, ওই পরিমাণ জাকাত পুনরায় আদায় করতে হবে।
কা’রণ, বিকাশের খরচ বাবদ কে’টে রাখা টাকা জাকাত হিসেবে আদায় হবে না। এক্ষেত্রে মুলনীতি হলো, জাকাত আদায় হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, হকদারকে সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়া। যতটুকু সম্পদের মালিক বানানো হবে ততটুকু সম্পদ জাকাত হিসেবে আদায় হবে। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা-২০৩)।