এজি লাভলু, স্টাফ রিপোর্টার
আমি জাকারিয়া মুবিন। গোদনাইল উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়নগঞ্জ থেকে ৯৯ সালে SSC পাশ করি। ছাত্রজীবনের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সার্টিফিকেট অনুযায়ী আমি একজন আয়ুর্বেদীক ডাক্তার। মিরপুরে অবস্থিত সরকারি ইউনানী ও আয়ুর্বেদীক মেডিকেল কলেজ থেকে B.A.M.S. ডিগ্রী অর্জন করেছি।
উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের। ভার্সিটি লাইফে ছাত্রাবাসে কিছুদিন মোবাইলের কার্ড বিক্রি করেছি বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়রদের কাছে। একজন কোম্পানী থেকে নিত, আমি আবার তার কাছ থেকে আনতাম। ফার্স্ট পার্টি না হওয়াতে, আর বাকীর চাপে পড়ে খুব বেশিদিন চলেনি সে ব্যবসা।
তারপর কিছুদিন রীতিমত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম খুলে বিজনেস করেছি। এখানেও সেকেন্ড পার্টি। গ্রামীণফোন থেকে ইভেন্টের অর্ডার নিত এক কোম্পানী, ওখানকার ম্যানেজারের সাথে লিংকের মাধ্যমে আমি বিড করে কাজ নিতাম। ব্রান্ড প্রমোটর যোগাড় করে তাদের দিয়ে ইভেন্ট সাকসেসফুল করা ছিল আমার কাজ। পার্টনারশিপ বিজনেস ছিল, পার্টনারের চতুরতার কাছে ধরাশায়ী হয়ে আর আমার লিংক ঐ ম্যানেজার ঐ কোম্পানী থেকে চলে যাওয়াতে ব্যাবসা থেমে যায়। ধোঁকা খেয়ে মন ভেঙ্গে যাওয়াতে আর ঐ ব্যবসা নিয়ে চেষ্টা করা হয়নি।
তারপর অনেক বছর বিরতির পর ন্যাড়ার ১বার বেলতলায় যাওয়ার প্রবাদ মিথ্যা প্রমাণিত করে আবার পার্টনারশিপ ব্যবসায় নামি। এবার অনলাইন স্টোরের বিজনেস। এখানে টাকাপয়সা খুব বেশি ধরা খাইনি, তবে ৬মাস আবোলতাবোল ঘুরাফিরা করে সময় নষ্ট করেছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, পার্টনারশিপও টেকেনি আর।
তারপর বছর দুয়েক আগে শুরু করেছিলাম এফ-কমার্স বিজনেস “জামালপুর বুটিকস”। মোটামুটি ভালোই চলছিলো। তবে পুঁজির সিংহভাগ প্রোডাক্ট আটকে যাওয়াতে আর ব্যাকআপ না থাকায় সেই ব্যবসাও বেশিদিন কন্টিনিউ করতে পারিনি, ইচ্ছে আছে হয়তো শুরু করবো সামনে।
তবে এবারের গল্পটা অন্যরকম। প্যান্ডেমিক সিচুয়েশনে চাকরির বাজারে ধ্বস নামায়, সেইসাথে চাকরি থাকা বা চলে যাওয়ার অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় এবং নিজের জন্য খেটে কিছু করার আকুলতা থেকেই আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার শুরু।
অর্গানিক ফুড আইটেম নিয়ে কাজ শুরু করেছি। মানুষের কাছে ভেজালমুক্ত কিছু খাবার পৌঁছে দেওয়ার গুরুদায়িত্ব কাঁধে নেয়া। কাজ শুরু করে এবার সোর্সিং নিয়ে পড়লাম বিরাট ঝামেলার মধ্যে। খাঁটি জিনিস খুঁজে পাওয়া যে এতটা পরিশ্রমের কাজ, মাঠে নামার আগে বিন্দুমাত্র ধারনাও ছিলনা। হাতে ভাজা মুড়ির জন্য অনেক জেলায়, থানায়, বাড়ির দরজায় ঘুরে সোর্স ফাইনাল করতে হয়েছে।
সরিষার তেলের জন্য মেশিন চালিত কাঠের ঘানি মোটামুটি সহজে পেলেও মূল ধাক্কাটা পোহাতে হয়েছে গরুর ঘানি খুঁজে বের করতে গিয়ে। অনেক কষ্টে, পাওয়া যাবেনা এমন আশা ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্তে সোর্স খুঁজে পেয়েছি, কিন্তু খুবই ব্যয়বহুল। যাই হোক, “জিনিস যেটা ভালো, দাম তার একটু বেশিই”।
তরতাজা সবজির সহজলভ্য সোর্স খুঁজে পেতেও কম ঘোরাঘুরি করতে হয়নি, তবে পেয়েছি।
সুগন্ধিযুক্ত পোলাও চাল তুলসীমালার সোর্সও পেয়েছি সহজেই, কিন্তু সোর্স থেকে মাল আনার খরচ পড়ে যাচ্ছে অনেক। এখানে কিছুটা অভিজ্ঞতার ঘাটতি অনুভব করছি নিজের। ইন-শা-আল্লাহ কাটিয়ে উঠতে পারবো।
এখন পর্যন্ত হাতে ভাজা মুড়ি, শেরপুরের তুলসীমালা চাল, পাবনার খাঁটি গাওয়া ঘি, গরুর ঘানিভাঙা সরিষার তেল, সরিষাবাড়ির প্যারা সন্দেশ, সুন্দরবনের মধু, সিলেটের চা, ইত্যাদি পন্য সোর্সিং করতে পেরেছি। আরও দেশীয় পন্যের সোর্স করার চেষ্টা চলছে। সকলের দোয়া কামনা করছি।
Facebook page link – https://www.facebook.com/tortajafoods/