পরকীয়া প্রেমের ঘটনায় প্রেমিকের স্ত্রীর সাথে চুলোচুলির জেরে প্রেমিকের ঘরে গিয়ে ফ্যানে ঝুলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন তিন সন্তানের জননী মিনা আক্তার (৩৫)।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের গুনধর বাজার এলাকার কদিমমাইজহাটি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহত মিনা আক্তার মদন গ্রামের রাজমিস্ত্রি রবিন মিয়ার স্ত্রী এবং কদিমমাইজহাটি গ্রামের ফজলুর রহমানের মেয়ে।
তিনি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে (মাস্টার রুলে) ঝাড়ুদারের কাজ করতেন।
স্থানীয়রা জানান, কথিত ‘উকিল বেয়াই’ এর সাথে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্কের জেরে ঝগড়ার সূত্র ধরে এ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মিনার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ২০ বছর আগে প্রেম করে মিনার বিয়ে হয়েছিল তার ফুফাতো ভাই রবিনের সাথে। স্বামীকে নিয়ে তিনি গুনধর বাজার সংলগ্ন কদিমমাইজহাটি গ্রামে তার বাবার বাড়িতে থাকতেন।
তাদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ের বছরখানেক আগে পার্শ্ববর্তী মদন গ্রামে বিয়ে হয়েছে।
মিনার বাড়ির পাশের অটোরিকশার গ্যারেজের মালিক মদন গ্রামের মো. আরসালান মিয়ার ছেলে তিন সন্তানের জনক আমির হোসেনের (৩৬) পরিচয়ে এই বিয়ে দেয়া হয়।
বিয়েতে মেয়ের ‘উকিল শ্বশুর’ বানানো হয় আমির হোসেনকেই। এ সুবাদে ‘উকিল বেয়াই’ আমির হোসেনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে মিনার।
প্রেমের সম্পর্ক ঘনত্বের দিকে গেলে আমির হোসেন মদন গ্রাম ছেড়ে মিনার বাড়ির পাশে বাজার সংলগ্ন আলমগীর হোসেনের বাড়ির দুটি কক্ষ পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য ভাড়া নেয়।
এবার পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় ‘বেয়াই’ ‘বিয়াইনের’ পরকীয়া প্রেমের রসায়ন জমে গেলে বিষয়টি আমির হোসেনের স্ত্রী শিল্পী আক্তার (২৫) কিছুটা টের পায়।
এ পরিস্থিতিতে ঘটনার দিন শনিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মিনা আকতার আমির হোসেনের ভাড়া বাড়ির সামনে দিয়ে মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে বাজারের দোকানে যাচ্ছিলেন।
এ সময় আমির হোসেনের স্ত্রী শিল্পী আক্তারের সামনে পড়ে গেলে মিনা আক্তার কে দেখে মুখে ভেংচি কাটে এবং অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে।
এ নিয়ে মিনা ও শিল্পীর মধ্যে কথাকাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে দুজনের মধ্যে চুলোচুলির ঘটনাও ঘটে।
এ সময় মিনা আক্তার শিল্পীর বুকে কামড়ও বসান। শিল্পীও তাকে মাটিতে ফেলে মারধর করে। পরে পাড়ার মহিলারা এসে দুজনকেই নিবৃত্ত করে।
ঝগড়ার পর শিল্পী আক্তার চিকিৎসা এবং বিচার দেয়ার জন্য ভাড়া বাড়িতে তালা লাগিয়ে ছেলে মেয়েদের নিয়ে স্বামীর পৈত্রিক বাড়ি মদন গ্রামে চলে যায়।
এ সুযোগে মিনা আক্তার শিল্পীর বসতঘরে ঢুকে ফ্যানের সাথে ওড়না পেচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।
দুপুর তিনটার দিকে আমির হোসেনের মেয়ে আফরিন (১০) বাড়িতে এসে দেখে তাদের ঘরে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে মিনার লাশ। পরে এলাকাবাসী খবর পেয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
সন্ধ্যার পর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা মিনার লাশ উদ্ধার করে।
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমিনুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। এ ব্যাপারে পরবর্তি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।