প্রাথমিক শিক্ষা সমস্যা ও করণীয়
লেখকঃ মোঃ আব্দুল কাদির মিয়া
একটি শিশু ভবিষ্যতে কতটুকু ন্যায় নীতিবান, আদর্শবান, চরিত্রবান হবে কিংবা দেশ, জাতি, সমাজের প্রতি কতটুকু দায়িত্বশীল হবে এটি অনেকাংশেই নির্ভর করে তার প্রাথমিক জীবনের শিক্ষার উপর। প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব তাই অপরিসীম। বিদ্যালয়ের প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে শিশু কেন্দ্রিক এবং সুনাগরিক হয়ে ওঠার লক্ষ্যে। প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো বীজবপনের ক্ষেত্র। একটি শিশু কাদামাটির মত। মাটি কাদা থাকা অবস্থায় যেমন তাকে বিভিন্ন রূপ দেয়া যায় কিন্তু পরবর্তীতে তা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠে না্ তেমনি সুনাগরিক হওয়ার গুণাবলী যদি শিশুকালে বিকশিত না হয় তাহলে পরে আর তা সহজে হয় না। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে কি করা উচিত, এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র, সমাজ এবং শিক্ষকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সমস্যা এবং তা উত্তরণে কি করণীয় সে সব বিষয় নিয়ে আলোকপাত করাই এই লেখাটির উদ্দেশ্য।
এক দশক আগেও বাংলাদেশে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীর হার ছিল খুব কম এবং মেয়েদের হার ছিল আরও কম। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ যেমন- ১ জানুয়ারি বই বিতরণ, বিনা বেতনে শিক্ষা, ফ্রি টিফিনের ব্যবস্থা, বাল্যবিবাহ রোধ প্রভৃতি কারণে স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি শিক্ষার হারও প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।
উন্নতদেশের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সাথে আমাদের মৌলিক পার্থক্য হলো আমরা শুরুতেই বাচ্চাদের ঘাড়ে এক বোঝা বইয়ের ব্যাগ চাপিয়ে ভালো রেজাল্টের জন্য শিক্ষক অভিভাবক সবাই ছুটাছুটি করি। ফলে ভালো রেজাল্টধারী অনেক ছাত্রছাত্রী পাওয়া গেলেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন ভাল মানুষের বড়ই অভাব। প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এই অবস্থার পিছনে যেসব কারণ দায়ী তন্মেধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নৈতিক শিক্ষার অভাব, শিক্ষকের অপ্রতুলতা, দারিদ্র, শিক্ষার পরিবেশের অভাব, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির দুর্বলতা, অভিভাবকদের অসচেতনতা ইত্যাদি। প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে যে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত সেগুলো সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরা হলো: ক।শুধু সিলেবাসভুক্ত পড়াশুনা না করিয়ে আদর্শ ভিত্তিক নীতি নৈতিকতা সম্পন্ন মানসিকতা তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। খ। চার বছর বয়সে স্কুলে গমন বাধ্যতামূলক করে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত শুধু নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ৬+ হরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান শুরু করতে হবে। গ। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাবী, চরিত্রবান ও যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে হবে। ঘ। শিক্ষকদের পৃথক বেতন কাঠামো করে তাদের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে। ঙ ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে।চ শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে হবে। ছ প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাসে অন্তত ১ দিন একজন সফল ব্যক্তিত্বকে দিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের কে ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং জাতির ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। পরিশেষে আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, বিনয়ী, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন একটি জাতি গঠনের জন্য যে সব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অবশ্যই একদিন দূর হবে এবং যে স্বপ্ন সাধ নিয়ে এই জাতির পথ চলা শুরু হয়েছিল তা অচিরেই পূর্ণ হবে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, দায়িত্ববোধ এবং সেবাধর্মী একটি জাতি গঠনে সবাই কাজ করব এই প্রত্যাশা রইল।
সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে ঝরেপড়া রোধ
সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ঝরে পড়া। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিকৃত শিশুদের ৫ বছর মেয়াদী প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ হওয়ার পূর্বে মধ্যবর্তী যে কোন সময়ে যে কোনো শ্রেণি থেকে যদি বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয় তখন তাকে আমরা ঝরে পড়া বলি। সাধারণত দারিদ্রতা, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, অভিভাবকের অসচেতনতা, পিতা-মাতার কলহ বিচ্ছেদ, শিশুর যত্নের ঘাটতি, মেয়ে শিশুকে শিক্ষা না দেয়ার প্রবণতা, অসুস্থতা, ভাষার সমস্যা, অপর্যাপ্ত শৌচাগার, বিদ্যালয় ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ, দুর্বল শিক্ষক ও শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাক্রমের অসংগতি, বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধাদি তথা খেলার মাঠের অভাব, পরীক্ষার ভীতি, যাতায়াত ব্যবস্থা, নিষ্ক্রিয় এসএমসি, শিক্ষক অভিভাবক সম্পর্ক ইত্যাদি কারণে শিশুরা শিক্ষার সোপান হতে ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়া রোধের জন্য বিদ্যালয়ে স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্ততা অতীব জরুরী। শিশু জরিপ, শতভাগ ভর্তি, ছাত্র ও শিক্ষকের নিয়মিত উপস্থিতি, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক দিবস পালন করা, মা সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশ ইত্যাদি কর্মকান্ড বিষয়ে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা গেলে সামাজিক সচেতনতা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি ঝরে পড়া রোধেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে। ঝরে পড়া রোধে বিদ্যালয়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন সম্পূর্ন বন্ধ করতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জরিপ করে দরিদ্র শিশুদের চিহ্নিত করে শিক্ষা উপকরণ, স্কুল ড্রেস ইত্যাদির ব্যবস্থা করা গেলে ঝরেপড়া রোধে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। বিদ্যালয়ে নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যক্রম ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা, গরিব মেধাবী শিক্ষাথর্ীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করা, মিড-ডে মিল বাস্তবায়ন করা, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নিরাপদ স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা করা, প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, কার্যক্রম দিয়েই শিক্ষাথর্ীকে বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। এই ক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শ্রেণিপাঠদান একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে। প্রতিটি শ্রেণিতে মাল্টিমিডিয়া পাঠদানের ব্যবস্থা করা গেলে শিক্ষার্থীদের যেমন পাঠ লাভে আনন্দ পাবে তেমনি হয়ে উঠবে কর্ম চ্ঞ্চল ও বিদ্যালয়মুখী। আজকের শিশুই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দিবে। কোনো শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরেই যদি ঝরে পড়ে তবে এ পরিস্থিতির খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকেই; যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। তাই ‘আমাদের বিদ্যালয় আমরাই গড়ব’ এই মন্ত্রে উদ্ধুদ্ব হয়ে বিদ্যালয়ের একজন অংশীজন হিসেবে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে বিদ্যালয়ের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন তথা ব্যক্তি, সমাজ, জাতির উন্নয়নের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন প্রাথমিক শিক্ষার পরিমাণগত ও গুণগুত মান উন্নয়ন। তাই ঝরে পড়া রোধে রাষ্ট্রের সকল শক্তি ও সামথর্য কাজে লাগাতে হবে।
লেখক
প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষাবান্ধব সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ
সমৃদ্ধ ও আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিকায়ন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। রূপকল্প ২০১১ বা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জনসম্পদ উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে এখন মানসম্মত শিক্ষার গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গুণগত মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাই হচ্ছে পরবর্তী উচ্চ শিক্ষার মূল ভিত্তি।
বর্তমান সরকারের নানামুখী সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে গত এক দশকে দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় বেশ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথমদিনেই রঙ্গিন বই তুলে দেয়া, উপবৃত্তি কার্যক্রম, সরকারী বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম প্রহরী নিয়োগ, স্টুডেন্টস কাউন্সিল গঠন প্রভৃতি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানসিক বিকাশ ও খেলাধূলার প্রতি আকৃষ্ট করতে শিক্ষার্থীদের জন্য বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টূর্ণামেন্টসহ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টিসহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি চালু, পুল শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগও প্রশংসনীয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমও শুরু হয়েছে এই শিক্ষাবান্ধব সরকারের সময়ে। গমনোপযোগী প্রায় শতভাগ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি, শিক্ষাক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সমতা আনা, নতুন শিক্ষাক্রমে নতুন পাঠ্যবই, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু, অবকাঠামোগত উন্নয়ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই উন্নতি হয়েছে। দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গুণগত শিক্ষার ধারা নিশ্চিত করতে মিড-ডে মিল বর্তমান সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে ঝরে পড়া শিক্ষাথর্ীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। এ কার্যক্রম শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিসহ গ্রাম ও শহর, ধনী ও গরীবের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে শিক্ষার মানের ব্যবধান কমাতে সাহায্য করবে। শিক্ষার্থীদের সেবার উৎকর্ষ সাধন, চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ, সৃজনশীলতা এবং দক্ষ ও যোগ্য মানবসম্পদে পরিনত হতে ভূমিকা রাখবে। এটি কার্যকর হলে প্রাথমিক স্তরের সকল শিশুকে স্কুলে ভর্তি, উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, পাঠের মনোনিবেশ, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তায় যথার্থ অবদান রাখবে। ভৌত ও অবকাঠামোগত সুবিধাধাদির পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষ ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। এর মাধ্যমে শিক্ষার গুণগতগত মানের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও প্রসার সম্ভব। বর্তমান সরকার দক্ষ শিক্ষক তৈরিতে বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সহ দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগ তৈরি করেছেন। পেশাগত মান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহী হওয়া উচিত। কারণ যেকোন পেশার উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। এসব প্রশিক্ষণ নি:সন্দেহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। আর এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারবে। বর্তমানে শিক্ষাকে আধুনিক যুগোপযোগী করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টরের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হচ্ছে। শিক্ষক ঘাটতি পূরণের জন্য প্রায় প্রতিবছর মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এসব উদ্দ্যোগ নিশ্চয়ই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে মানসম্মত শিক্ষা অর্জনে সহায়ক করবে। প্রাথমিক শিক্ষাকে সার্বজনীন, মানসম্মত ও যুগোপযোগী করতে হলে এর বিকেন্দ্রীকরণ এবং সচেতন জনগণের অংশ নেয়া অত্যন্ত জরুরী। এ জন্য এলাকাভিত্তিক তথা উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। সবাই মিলে দায়িত্বশীল হলে গুণগত শিক্ষা ও কাঙ্খিত প্রাথমিক শিক্ষায় পৌছাঁব এবং শিক্ষাবান্ধব সরকারের স্বপ্ন পূরণে সহায়ক হব।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ
শিক্ষা আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের হাতিয়ার। শিক্ষক হলো আলোকিত সে সমাজ গড়ার সুনিপুণ কারিগর। শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহান পেশা। একজন ছাত্রকে কেবল শিক্ষিতই নয়, বরং ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার গুরু দায়িত্বটিও থাকে শিক্ষকের উপর। তাই একজন শিক্ষককে হতে হয় অনেক বেশি দায়িত্বশীল এবং ধৈর্যশীল। তবে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। একটি শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন রকমের শিক্ষার্থী থাকে। তাদের মধ্যে কেউ একটি বিষয় সহজে বুঝতে পারে, আবার কারও বুঝতে যথেষ্ট সময় লাগে। কেউ শান্ত স্বভাবের, কেউবা আবার বেশ চঞ্চল। কেউ খুব মনোযোগী, কেউ আবার একেবারেই মনোযোগ দিতে চায় না। এমন সব বিষয়ে একজন শিক্ষককে প্রতিনিয়ত খেয়াল রেখে শিক্ষার্থী পড়াতে হয়। শিক্ষক-শিক্ষাথর্ীর মাঝে বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং অনেকটা সময় কাটে শ্রেণিকক্ষে; তাই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঠিক ও কার্যকরী শিক্ষা প্রদান এবং সেই পাঠে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী করে তোলা একজন শিক্ষকের জন্য খুবই গুরুত্বের।
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে একজন শিক্ষক যা যা করতে পারেনঃ
শ্রেণিকক্ষের পরিবেশঃ শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রেণিকক্ষের মেঝে, জানালা, দেয়াল, চকবোর্ড, আসবাবপত্রসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী করে সাজানো দরকার। শিক্ষার্থীদের বসার স্থান নির্বাচনঃ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের সঠিক পদ্ধতিতে বা আরামদায়ক বসার স্থানের ব্যবস্থা করা উচিত। আই কন্টাক্ট করাঃ শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার সময় তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তাদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে।
উদাহরণ সহকারে পড়ানোঃ কী পড়াচ্ছেন তা শিক্ষার্থীদের মাঝে উদাহরণের মাধ্যমে পড়ানো হলে শিক্ষার্থীরা পড়ানোর বিষয়বস্তু সহজে বুঝতে পারবে। ফলে তাদের মনোযোগও পাঠে কেন্দ্রীভূত হবে। সহজ ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপনঃ সহজবোধ্য ভাষায় বোধগম্য উদাহরণের মাধ্যমে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিত। জটিল ভাষায় বুঝালে তাদের মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। এছাড়াও সঠিক অঙ্গভঙ্গি, শিক্ষাথর্ীদের প্রশ্ন করতে দেওয়া, শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করা, হতাশাজনক কথা না বলা, শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করা তাতে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে। একজন আদর্শ শিক্ষকের উচিত সৃজনশীল উপায়েই শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান প্রক্রিয়া পরিচালনা করা। শিক্ষক শুধু পাঠ্যবই পড়াবেন না; তিনি শিক্ষার্থীর মানসিক ও শারীরিক দুঃখ আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করবেন। শিক্ষার মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করবেন। এক কথায় শিক্ষার্থীদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলো শিক্ষকের দায়িত্ব।
লেখক
মোঃ আব্দুল কাদির মিয়া
উপজেলা নির্বাহী অফিসার
কিশোরগঞ্জ সদর।