ইরিনা হানদোনো ইন্দোনেশিয়ার সুপরিচিত ন’ওমুসলিম। ১৯৮৩ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। বর্তমানে একজন ই’সলাম প্রচারক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ন’ওমুসলিমদের জন্য ইরিনা সেন্টার নামে একটি স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেছেন এই নারী।
ইস’লাম গ্র’হণ বিষয়ে ইউটিউবে প্রচারিত তাঁর একটি আত্মকথার পরিশীলিত অংশ প্রকাশ করা হলো আ’মি ইন্দোনেশিয়ার একটি ধার্মিক খ্রিস্টান প’রিবারে বেড়ে উঠি।আমি প্রাচুর্যের ভেতরই বড় হয়েছি। আমার পরিবার ছিল ধনী।
তারা আমা’র শি’ক্ষা সুনিশ্চিত করতে সব করেছে। তখন সমাজের প্রচলিত ধারণা ছিল, খ্রিস্টানরা দেশের বেশির ভাগ মানুষ থেকে ভিন্ন। তারা ধনী, শি’ক্ষিত। সুন্দর সুন্দর জুতা পরে।
আর মুসলিম হ’ওয়ার অর্থ—তারা দরিদ্র, অশিক্ষিত এবং মসজিদের সামনে থেকে তাদের কম দামি স্যান্ডেলও চুরি হয়ে যায়।খুব ছোট থেকে আমি ধর্মীয় অনুপ্রেরণা লাভ করি।
আমি স্র’ষ্টার জ’ন্য জীবন উৎসর্গ করার ইচ্ছা পোষণ করতাম। কিশোর বয়সে স্থানীয় চার্চের বিভিন্ন কা’র্যক্রমে অংশ নিতাম। একজন নান হওয়ার প্রবল স্ব’প্ন ছিল আমার। একজন ক্যাথলিক হিসেবে জাগতিক জীবন চার্চে কাটাতে চাইতাম, যেখানে সবাই ভালো কাজ করে।
হাই স্কু’ল স্ত’র শেষ করার পর দীক্ষা নিতে একটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হই।অবশ্য আমার সিদ্ধান্তে আমার পরিবার বিস্মিত হয়। কারণ পাঁচ ভাই-বো’নের ভেতর আমি ছিলাম একমাত্র মেয়ে। তাঁ’রা আমাকে কখনো চোখের আড়াল হতে দিতেন না। তবে আমার দৃঢ়তা দেখে তাঁরা নমনীয় হন এবং আমার ইচ্ছা পূরণে সম্মতি দেন।
আ’রো প’রুন : টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবো, প্রধানমন্ত্রীকে বললেন সাকিব একজন শিক্ষানবিশ নান হিসেবে আমি কাজ শুরু করি।এ জন্য আমাকে কোনো বেগ পেতে হয়নি। তবে চার্চের বাইরে বিশেষ প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়ে’ছিল। সে’খানে ধর্ম-দর্শন বোঝার জন্য তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব পড়ানো হয়। আমি এ সময় ইসলাম ধর্মের তাত্ত্বিক আলোচনায় মনোযোগী হলাম।
পৃ’থিবীর স’র্ববৃহৎ মুসলিম জনসংখ্যার দেশে জন্মালেও এটিই ছিল ইসলাম সম্পর্কে আমার প্রথম জ্ঞানার্জন।চার্চের সেই প্রশিক্ষণে আমি ইসলাম সম্পর্কে কিছু কুসংস্কারের চর্চা দেখতে পাই, যা আমি খ্রিস্টসমাজে আগেও দেখেছিলাম। মুসলিমরা দরিদ্র, অশিক্ষিত, অসভ্য ইত্যাদি।
অবশ্য আ’মার ২০ ব’ছর বয়’সে আমি এসব কুসংস্কার কখনো গ্রহণ করিনি, বরং নিজে বিচার-বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছি।আমি অন্যান্য দেশ সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করলাম। বিশেষত অমুসলিম দেশ সম্পর্কে। আমি দেখলাম, ইন্দোনেশিয়ার মতো দারিদ্র্যের শিকার আরো অনেক দেশ আছে। যেমন—ভা’রত, চীন, ফিলিপাইন, ইতালি (তখন) এবং দ’ক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ। আমি আমার শিক্ষকের কাছে ইসলাম সম্পর্কে পড়ার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।আমার অধ্যয়নের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামের ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা খুঁজে বের করা
। আ’মার মি’শন শুরু হলো। আমি কোরআন নিয়ে বসলাম এবং এমন সব বিষয় অনুসন্ধান শুরু করলাম, যা ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারব। আমি তখনো জানি না, কোরআন ডান দিক থেকে পড়তে হয়।অন্যান্য বইয়ের মতো বাঁ দিক থেকে পড়তে লাগলাম।
প্রথমেই আ’মার চো’খে পড়ল—‘বলুন! তিনি আল্লাহ। তিনি এক। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দে’ননি এবং কারো থেকে জন্ম নেননি। কেউ তাঁর স’মকক্ষ নয়।’ (সুরা : ইখলাস) কোরআনের এই সুরা পড়ে মুগ্ধ হলাম।
আমার অ’ন্তর সা’ক্ষ্য দিল আল্লাহ এক। স্রষ্টার কোনো সন্তান নেই।তিনি কারো সৃষ্টি নন। কোনো কিছুই তাঁর সমকক্ষ নয়। সুরা ইখলাস পাঠ করার পর এ’কজন যাজকের কাছে স্রষ্টায় বিশ্বাসের মূলকথা কী জানতে চাইলাম।
তাঁকে ব’ললাম, আ’মি বুঝছি না একজন ঈশ্বর একই সময়ে একজন ও তিনজন কিভাবে হয়? তিনি বললেন, স্রষ্টা মূলত একজন। তবে তাঁর তিনটি প্রকাশ বা ব্যক্তিত্ব রয়েছে।ঈশ্বর যিনি পিতা, ঈশ্বর যি’নি পুত্র, ঈ’শ্বর যিনি পবিত্র আত্মা। এটিকেই ত্রিত্ববাদ বলা হয়।
তাঁর ব্যাখ্যা আ’মি গ্র’হণ করলাম। কিন্তু রাতে সুরা ইখলাসের বক্তব্যগুলো আমার চিন্তায় উঁকি দিতে থাকে। স্রষ্টা একজন। তিনি কারো সৃষ্টি নন। কেউ তাঁ’র স’ন্তান নয়। পরদিন সকালে আমি আবারও আমার শিক্ষকের কাছে গেলাম।
তাঁকে ব’ললাম, ত্রি’ত্ববাদের ধারণাটি আমার বুঝে আসছে না।তিনি আমাকে একটি বোর্ডের কাছে নিয়ে গেলেন। সেখানে একটি ত্রিভুজ এঁকে বললেন, এখানে ত্রিভুজ একটি। কিন্তু তার দিক বা বাহু তিনটি। ত্রিত্ববাদের ধারণাটিও ঠিক তেমন। তাঁর বক্তব্যের পর আ’মি বললাম, তাহলে তো এটিও সম্ভব আ’মাদের প্রভুর চারটি দিক বা বাহু থাকবে। তিনি বললেন, তা সম্ভব নয়।
আমি জা’নতে চাই’লাম কেন? তিনি অধৈর্য হলেন।বারবার বলতে লাগলেন, সেটি সম্ভব নয়। অন্যদিকে আমি প্রশ্ন করেই গেলাম। একপর্যায়ে তিনি বললেন, ত্রিত্ববাদের এই ধারণা আমি গ্রহণ করেছি। তবে তা আমার বুঝে আসে না। তুমিও এটি মেনে নাও, হজম করো। বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করা পাপ। কিন্তু আমি হজম করতে পারলাম না।
রাতে আ’বারও কো’রআনের কাছে ফিরে এলাম। সুরা ইখলাস পাঠ করলাম, যেন কিছু আমার অন্তরে প্রবেশ করল।আমার কোনো সংশয় রইল না আল্লাহ এক। আমার ব্যক্তিগত চিন্তা ও গবেষণা থেকে বুঝতে পারলাম ত্রিত্ববাদের ধারণা মানুষের তৈরি, যার উদ্ভব হয়েছে ৩২৫ খ্রিস্টাব্দের পর।
আগে তা ছিল না। বি’ষয়টি আ’মার ক্যাথলিক পরিচয়কেই বোঝা করে তুলল। এরপর মুসলিম হতে এবং নতুন ধর্মবিশ্বাসের প্রকাশ্য ঘোষণা দিতে আমার ছয় বছর লেগেছিল।যখন আমি ইসলাম গ্রহণের আবেদন করলাম, ধর্মীয় পণ্ডিত জানতে চাইলেন আমি কি পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত? তিনি বললেন, ইসলাম গ্রহণ করা সহজ। কিন্তু পরবর্তী জীবনে বহু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আমি প্রস্তুত ছিলাম।
নি’জেকে র’ক্ষা করার, নিজের আত্মাকে রক্ষা করার অধিকার আমার ছিল। অমূলক কোনো মতবাদ নিয়ে পড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।ইসলাম গ্রহণের পর আমি আমার পরিবার ও সম্পদ হারাই। তবে আল্লাহ আমার সঙ্গে ছিলেন। তিনি ছিলেন আমার আশ্রয়, একমাত্র আশ্রয়। একজন নতুন মুসলিম হিসেবে আমি আমার করণীয় সম্পর্কে সচেতন ছিলাম।
আমি পাঁচ ও’য়াক্ত নামাজ আদায় করতাম, রমজানে রোজা রাখতাম এবং হিজাব পরতাম। আগেও আমার জীবন ছিল স্রষ্টার জন্য উৎসর্গিত। এখনো আমার জীবন আল্লাহর জন্য নিবেদিত। আলহামদুলিল্লাহ! আমার জীবন শুধু আল্লাহর জন্য নিবেদিত।