লিভারসিরোসিস- ভয়ংকর একটি রোগের নাম। সিরোসিস এর কারনে ক্যান্সার হতে পারে। আমার পরিচিত একজন রোগী মনির, বাড়ি হোসেনপুর। মাঝে মধ্যে জন্ডিস হয় তাই তারা কবিরাজ দেখায়। কবিরাজ তাকে বলে “মাইট্যা জন্ডিস”। একসময় পেটে পানি চলে আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। তখন ধরা পড়ে সিরোসিস কিন্তু ৩য় পর্যায়ে। কিছুদিন চিকিৎসার পড়ে তিনি মারা যান।
সিরোসিস কি?
সিরোসিস লিভারের এমন একটি রোগ যাতে লিভারের ফাংশন প্রায় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে নস্ট হয়ে যায় লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা। অনেক ক্ষেত্রেই লিভার সিরোসিস থেকে দেখা দেয় লিভারে ক্যান্সার। তবে সিরোসিস আক্রান্ত রোগী বহু বছর পর্যন্ত কোনো রকম রোগের লক্ষণ ছাড়াই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন। সিরোসিস রোগের লক্ষনগুলি যতোদিনে দেখা দেয় ততোদিনে ডিকম্পেনসেটেড বা এ্যডভান্সড সিরোসিসে চলে যায়।
সিরোসিসের লক্ষণ কি?-
অনেক সময় সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অনেক সময় রোগীরা দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, দাতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, পেটের ডান পাশে ব্যাথা, জ্বর-জ্বর ভাব, ঘন-ঘন পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা অনুভব করতে পারেন।
কিন্তু এডভান্সড সিরোসিসে পায়ে-পেটে পানি আসে, জন্ডিস হয় এবং রোগী এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। রক্তবমি ও পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি আসা, কিডনি ফেইলিউর, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থেকে রক্তক্ষরণ ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সব চেয়ে যা ভয়াবহ তা হলো, লিভারে দেখা দিতে পারে ক্যান্সার।
সিরোসিস কেন হয়?
ইউরোপ, আমেরিকায় সিরোসিসের প্রধান কারণ মদ্যপান আর হেপাটাইটিস সি ভাইরাস। বাংলাদেশে লিভার সিরোসিসের প্রধাণ কারণ হেপাটাইটিস বি ভাইরাস, আর এর ঠিক পরেই রয়েছে ফ্যাটি লিভার। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ও এ্যালকোহলের স্থান বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের অনেক পরে। ডায়াবেটিস, রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, মেদ-ভুড়ি, উচ্চরক্ত চাপ, হাইপোথাইরয়ডিজম ফ্যাটি লিভারের প্রধাণ কারণ। এদেশেও ফ্যাটি লিভার জনিত লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের রোগী প্রচুর!
সিরোসিস হলে কি করবেন?
সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যাক্তির উচিৎ লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেয়া ও নিয়মিত ফলোআপে থাকা। এতে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। পাশাপাশি সিরোসিসের কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা গেলে লিভারের খারাপের দিকে যাওয়ার ঝুকিও অনেক কমে যায়। লিভার সিরোসিস ও এর কারণগুলোর আধুনিকতম চিকিৎসা আজ এদেশেই সম্ভব। দেশেই তৈরী হচ্ছে অধিকাংশ ওষুধও। এদেশে যা নেই তা হলো লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের ব্যবস্থা। প্রতিবেশী দু-একটি দেশে এ সুযোগ থাকলেও তা খুবই ব্যয়বহুল আর সঙ্গত কারণেই আমাদের সিংহভাগ রোগীর সাধ্যের অতীত। সেদিন হয়তো আর বেশী দুরে নয় যেদি এদেশেই অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সম্ভব হবে।
ক্যান্সার/কিডনী/লিভার সিরোসিস আক্রান্ত রোগীর আর্থিক সহায়তার জন্য ক্লিক করুন-
মেডিসিন,লিভার ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ
ডাঃ মুহাম্মাদ আবিদুর রহমান ভূঞা,
এমবিবিএস, বিসিএস,
এমডি(হেপাটোলজী).
আরপি মেডিসিন,
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ।