মা’সের মা’সের পর মাস বাংলাদেশে আটকে থাকা দুই সহস্রাধিক ভারতীয় নাগরিক দেশে ফেরার জন্য এ’বার বেনাপোল সীমান্তে গিয়ে ধর্নায় বসতে চান বলে জানাচ্ছেন।
অন্তত আড়াই হাজার ভারতীয় লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে আটকে রয়েছেন। কেউ পাঁচ মাস, কেউ ছয় বা তারও বে’শি মাস ধরে অপেক্ষা করছেন কবে সী’মান্ত খুলবে আর তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন।তারা বলছেন, তারা অধৈর্য হয়ে পড়ছেন অপেক্ষা করতে করতে।‘
আমরা যা’রা এদেশে এসে আটকে রয়েছি, তার মধ্যে যত জনের সাথে যোগাযোগ হয়েছে, তারা ঠিক ক’রেছি, এবার বেনাপোল সীমান্তে গিয়ে ধর্নায় বসব আমরা। ২৪ তারিখ ধর্নার দিন ঠিক হয়েছে। আর কতদিন আমরা এভাবে বিদেশে এসে আটকে থাকব?
কেন নিজের দেশেই ঢুকতে পারছি না আমরা?’ প্রশ্ন প’শ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাসিন্দা শ্যা’মল পালের।মার্চ মাসে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন অসুস্থ নানীকে দেখতে। কিন্তু তারপর আর দেশে ফিরতে পারেননি। ওদিকে দেশে তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তবুও ফেরার উপায় নেই।
কেউ গিয়েছিলেন আত্মীয়র বিয়েতে, কেউ অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে, কেউ আবার গিয়েছিলেন বাংলাদেশে ঘু!রতে।
কিন্তু ক’রোনাভা’ইরাস সংক্রমণ নি’য়ন্ত্রণ করতে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে ভারতে লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সীমান্ত বন্ধ হয়ে যায়। এরা ভারতে প’রিবার পরিজন ছেড়ে বাংলাদেশেই থেকে যেতে বা’ধ্য হন।
কলকাতার বা’সিন্দা মু’ক্তি সরখেল রাজশাহীতে আত্মীয়র বাড়িতে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আর খোঁজ রাখছেন যে কবে খুলবে সীমান্ত, কবে ফিরতে পারবেন নিজের দেশে।
তিনি টেলিফোনে বলছিলেন, ‘ভাইপোর বিয়েতে এ’সেছিলাম মার্চ মাসে। কদিনের ভিসা নিয়ে। তা’রপরেই লকডাউন শুরু হয়ে গেল, আর আমি এখানেই আটকে গেলাম।
কলকাতায় আ’মার প’রিবার রয়েছে, আর আমি এখানে এক আত্মীয়র বাড়িতে পড়ে আছি। কীভাবে যে ফিরব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’কোথায় কোন ভারতীয় আটকিয়ে আছেন, সেই খবর যোগাড় করছেন সকলেই। অচেনা অপরিচিতদের সাথেও ফোনে পরিচয় হয়ে যাচ্ছে। যোগাযোগ রাখছেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বানিয়েও।
নওগাঁ জে’লায় এক আ’ত্মীয়র বাড়িতে সীমান্ত খোলার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন কলকাতার বাসিন্দা ছবি ব্যানার্জী।‘কী উদ্বেগের মধ্যে যে দিন কাটছে বলে বোঝানো কঠিন।
আমার শা’রীরিক অ’সুস্থতার জন্য হেঁটে বেনাপোল সীমান্ত পেরনো অসম্ভব। হিলি সীমান্ত দিয়ে ফিরতে পারলেই সব থেকে ভাল,’ বলছিলেন ছবি ব্যানার্জী।আটকে পড়া ভারতীয়দের একাংশকে ঢাকা থেকে বি’মানে ফিরিয়ে এনেছে ভারত সরকার। কিন্তু ঢাকা থেকে দিল্লি গিয়ে তারপর পশ্চিমবঙ্গে ফেরার সেই পথে বিমানের টিকিট কেনার অর্থ অনেকের হাতে নেই।
এমনিতেই বিদেশে দীর্ঘ সময় থাকতে বাধ্য হওয়ায় হাতের টাকা পয়সা শেষ।ছবি ব্যানার্জীর কথায়, ‘ঢাকাতেও যে’ভাবে রোগটা ছড়িয়েছে শুনছি, সাহস হ’চ্ছে না ঢাকা গিয়ে বিমানে চেপে দিল্লি যেতে। আবার সেখান থেকে কলকাতায় কীভাবে পৌঁছাব তাও জানি না।
কিছু একটা ব্যবস্থা করুক সরকার।’কলকাতার ফল ব্য’বসায়ী মুহাম্মদ কাইয়ুম বাংলাদেশে ঘুরতে গি’য়েছিলেন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে – দিন পনেরোর জন্য। কিন্তু প্রায় ছয় মাস হতে চলল তিনি হোটেলে থাকছেন, কখনো বা আত্মীয়দের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আসছেন।‘
এসেছিলাম ১৫ দিনের জন্য, আটকে আছি প্রায় ছয় মাস। একটা হোটেলে থাকছি, আর আত্মীয়স্বজনরা খা’ওয়াচ্ছেন। যা টাকাপয়সা নিয়ে এসেছিলাম, তাও প্রায় শেষ।
কী অবস্থায় যে আছি, বলার নয়। যেখানে খোঁজ পাচ্ছি যে ভারতীয় কেউ আটকে আছে, তাদের সাথেই যো’গাযোগ করার চেষ্টা করছি। অনেকের সা’থেই এভাবে যোগাযোগ হয়েছে,’ বলছিলেন মুহাম্মদ কাইয়ুম।ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন বলছে, তারাও সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত যাত্রী পারাপার শুরু করার চেষ্টা করছে।
পশ্চিমবঙ্গ সর’কারকে এ ব্যা’পারে তারা জানিয়েছে।কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো না হওয়ায় উদ্বেগের মধ্যেই দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন কয়েক হাজার ভারতীয় নাগরিক।