বাং’লাদেশে এবার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে এক সংকট’কালীন সময়ে। ২ মাসেরও বেশি সময় ধরে করো’না সংকট যেন আমাদের জনজীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে।রাষ্ট্রীয় জীবনে এক সংকটের বলিরেখা স্পষ্ট। তারমধ্যে আম্পানের ছোবল আমাদেরকে একটি লণ্ডভণ্ড অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। এর ভেতরেই জনগণের মধ্যে নানা রকম অশান্তির গুঞ্জন।সরকারের ভেতরও নানা রকম বিভাজন, মেরুকরণ।
আ’র বিরোধী দলের মধ্যে অ’পেক্ষার প্রহর শেষ হওয়ার গুঞ্জন। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন, বাংলাদেশে কী’ হচ্ছে? ঈদের পর কী’ হবে?১. করো’নার ছুটি কি বাড়বে?সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, ঈদের পর কি আম’রা আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসব? নাকি করো’নার ছুটি বাড়বে? ২৬ মা’র্চ থেকে ছুটির ফাঁদে রয়েছে দেশ। দুই’মাস হতে চলল টানা ছুটি চলছে।
য’দিও সরকারি কিছু অফিস খোলা হয়েছে, জরুরী সেবাগুলো বহাল রয়েছে। কিন্তু একটি স্বাভাবিক কর্মজীবন, বেসরকারি অফিস ও প্রতিষ্ঠানগুলো চলমান রাখা, দোকানপাট খোলা, আম’রা এ রকম স্বাভাবিক জীবনে ফিরব কবে, এটা অনেক বড় প্রশ্ন? তার চেয়েও বড় প্রশ্ন হল ঈদের পর যেটা সরকার ছুটি ঘোষণা করেছে ৩০ মে পর্যন্ত, সেই ছুটির পর কি আম’রা কর্মজীবনে ফিরতে পারব নাকি ছুটি আরও বাড়বে?২. ব্যর্থ এবং অযোগ্যদের বি’রুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে?করো’না সংকট মোকাবেলার সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির বি’রুদ্ধে ব্যর্থতা ও অযোগ্যতার অ’ভিযোগ উঠেছে। গণমাধ্যমে এই নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা হয়েছে, কথাবার্তা হয়েছে। সরকারের ভিতরেও এই নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে অনেকেই ধারণা করছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো ঈদের পরে ব্যর্থ ও অযোগ্যদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। আদৌ তিনি ব্যবস্থা নেবেন কিনা বা যাদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ উঠেছে তাদের দিয়ে চালাবেন কিনা এটি একটি বড় প্রশ্ন।
ঈ’দের পরে যদি দ্রুতই যাদের বি’রুদ্ধে অ’ভিযোগ উঠেছে তাদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বোঝা যাবে হয়তো শেখ হাসিনা এই টিম নিয়েই এগুতে চান।৩. মন্ত্রিসভায় কি পরিবর্তন হবে?ব্যর্থ এবং অযোগ্যদের পাশাপাশি সবচেয়ে আ’লোচিত ছিল মন্ত্রিসভা’র রদবদল। অনেকেই মনে করছেন যে, বর্তমান যেই মন্ত্রিসভা সেই মন্ত্রিসভা’র অনেকেই সীমাহীন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। এইজন্য তাদের পরিবর্তন প্রয়োজন। এই মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের গুঞ্জন করো’না সংকটের পর থেকেই ছিল। তাই প্রশ্ন হল, ঈদের পর শেখ হাসিনা কি করবেন? তিনি কি মন্ত্রিসভা’র পরিবর্তন করবেন নাকি এই মন্ত্রিসভা নিয়েই দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন।৪. প্রণোদনার প্যাকেজ কি বাস্তবায়ন হবে?সরকার ৯২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে।
এ’রমধ্যে কেবল গার্মেন্টসের ৫ হাজার কোটি টাকা, যেটি শ্রমিক-কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিষোধের জন্য প্রদত্ত, সেটি ছাড়া কোন প্রণোদনার টাকা এখনও দেওয়া হয়নি। এরমধ্যে ব্যাংকগুলো নানা রকম গড়িমসি করছে বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রণোদনার টাকা দেওয়া নিয়ে নানারকম সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে, এই প্রণোদনা প্যাকেজ যদি দ্রুত বাস্তবায়িত না হয়, তবে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। প্রশ্ন হল, এই প্রণোদনার প্যাকেজ কি বাস্তবায়িত হবে? সেটা বাস্তবায়িত হবে কিনা সেটা বুঝা যাবে ঈদের পরেই।৫. গরীব মানুষকে আর কতদিন সহায়তা দেওয়া হবে?এটি হল সরকার এবং অর্থনীতির সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যে, করো’না সংকটের কারণে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী কার্যত বেকার এবং আয় রোজগারহীন। এদেরকে সরকার নানারকম সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রেখেছে।
স’র্বশেষ ৫০ লাখ কর্মহীন পরিবারকে আড়াই হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এসব সহায়তা যে কোন অর্থনীতির উপর একটা বড় চাপ। দীর্ঘকাল ধরে সরকার একটা বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে খাইয়ে পড়িয়ে রাখতে পারবে না। কাজেই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হচ্ছে এই গরীব মানুষগুলোকে কতদিন সহায়তা দেওয়া হবে? এটার উপর নির্ভর করছে আমাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।কাজেই অনেক প্রশ্নের উপর নির্ভর করছে ঈদের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনা এবং রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি।