ঐ’তিহাসিক সুনিল অমৃ’ত বঙ্গোপসাগরকে বর্ণনা করেছেন এভাবে: এক বিস্তীর্ণ জলরাশি, যা জানুয়ারিতে একেবারে শান্ত এবং নীল; আর গ্রীষ্মের বৃষ্টিতে এটির রূপ একেবারে ভিন্ন। ফুঁসতে থাকা ঘোলা জলের সমূদ্র।বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে রেখেছে যে তটরেখা, সেখানে বাস করে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ।
বি’শ্বের ই’তিহাসে যতসব ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আ’ঘাত হেনেছে, তার বেশিরভাগই হয়েছে এই বঙ্গোপসাগরে।ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামের একটি ওয়েবসাইটে বিশ্বের ৩৫টি সবচাইতে ভয়ঙ্কর মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের তালিকা রয়েছে। এই তালিকার ২৬টি ঘুর্ণিঝড়ই বঙ্গোপসাগরে।
ঘূ’র্ণিঝড় আম্পান, যেটি বুধবার বিকেল নাগাদ বাংলাদেশ এবং ভারতের উপকূলে আ’ঘাত হানবে বলে আ’শঙ্কা করা হচ্ছে, সেটি হবে এধরণের ২৭তম ঘূর্ণিঝড়।ভারতের আবহাওয়া দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি যখন উপকূলে আ’ঘাত হানবে, তখন এটি ভয়ংকর শক্তিশালী হয়ে উঠবে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হবে ঘন্টায় ১৯৫ কিলোমিটার (১২১ মাইল)।
জ’লোচ্ছাস হবে প্রায় দোতলা বাড়ির উচ্চতায়।আম্পান নিয়ে কেন এত বেশি উ’দ্বেগ
এই উ’দ্বেগের প্রধান কারণ এটি একটি ’সুপার সাইক্লোন’। এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতি হবে প্রতি ঘন্টায় ১৩৭ মাইল বা ২২০ কিলোমিটারের বেশি।আর সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় বহু ধরনের বি’পদ নিয়ে আসে।
প্র’থমত: প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া সবকিছু ধ্বং’স করে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত: ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে সামূদ্রিক জলোচ্ছ্বাস ধেয়ে আসবে। আর ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে প্রচন্ড ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হবে, যাতে বন্যা দেখা দেবে।উনিশশো সত্তর সালের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের ভোলায় যে ঘূর্ণিঝড় আ’ঘাত হেনেছিল, সেটি ছিল বিশ্বের ইতিহাসের সবচাইতে প্রা’ণঘা’তী ঘূর্ণিঝড়। এতে মা’রা গিয়েছিল প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ। এই ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছিল তার উচ্চতা ছিল ১০ দশমিক ৪ মিটার বা ৩৪ ফুট।
ই’তিহাসবিদ ডক্টর সুনিল অমৃ’ত, যিনি হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, তিনি বলছেন বঙ্গোপসাগরে সাম্প্রতিক সময়ে আরও বেশি ঘনঘন প্রচণ্ড মাত্রার ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে।একজন সাংবাদিক এই ঘূর্ণিঝড়ের বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে: “মনে হচ্ছে যেন কাগজের ও’পর আঁকা একটি ছবির ও’পর কেউ এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছে।
অ’নেক যত্ন করে আঁকা লাইনগুলো (বদ্বীপের নদীপথ) মুছে গেছে। যে কাগজের ও’পর ছবিটি আঁকা হয়েছিল সেটি যেন দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।”বঙ্গোপসাগরের সুপার সাইক্লোনের অবারিত ক্রোধ কতটা বিধ্বং’সী হতে পারে, সেটা আমি তখন প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম।