গো’টা শ’রীর অসাড়। সচল শুধু মাথা ও ডান হাতের দুটি আঙ্গুল। সেগুলোই কাজে লাগিয়ে আউটর্সোসিংয়ের মাধ্যমে প্রতিমাসে গড়ে ৫০ হা’জার টাকা আয় করে গোটা সংসারের হাল ধরেছেন ফাহিমুল করিম।
শুধু সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আননেনি এই যুবক। তার অর্জিত অর্থ দিয়ে মাগুরা শহরে জমি কি’নে বাড়ি করে মা-বাবার জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন বিস্ময়কর এই যুবক।ফাহিমের বাবা এক’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিপনন কর্মী রেজাউল করীম জানান, মাগুরা শহরের ভায়না পিটিআই পাড়ার ভাড়াবাসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে তিনি বসবাস করে আসছিলেন।
টানাটানির সংসার হলেও ভালভাবেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু ২০১২ সালে জেএসসি পরীক্ষার আ’গে হঠাৎ করেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে একমাত্র ছেলে ফাহিম। চিকিৎসকরা জানান, ডু’চেনেমাসকিউলার ডিসথ্রফি রোগে আক্রান্ত ফাহিম। বাংলাদেশ ও ভারতের চিকিৎসকদের কাছে নেওয়া হয় তাকে।
কিন্তু চিকিৎসকরা জানান, জিনেটিক এ রোগে তেমন কোন চিকিৎসা নেই দেশে-বিদেশে কোথাও। জটিল এ রো’গে আক্রান্ত হয়ে ধীরে-ধীরে হাত-পাসহ গোটা শ’রীর শুকিয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হতে থকে ফাহিম।
এক পর্যায়ে হাতের দুটি অঙ্গুল ও মাথা ছাড়া গোটা শরীর অচল হয়ে যায় ফাহিমের। অসুস্থ শরীরে ফাহিম তার হাতের মাত্র সচল দুটি অঙ্গুল দিয়ে অ’নলাইনে কাজ করে মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয় করছে।
গোটার সংসারের ভার এখন তার ওপর। এছাড়া ফাহিম মাগুরা শহরের জমি কিনে বাড়ি করে তাদেরও মা’থা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে।রেজাউল করিম বলেন, পুরোপুরি সুস্থ না হলেও দেশের বাইরে নি’য়ে উন্নত চিকিৎসার করাতে পারলে ফাহিমের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হতো।
তিনি এ জন্য সরকারের সহায়তা কমানা করেছেন।ফাহিমুল করীম জানান, বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টি’ফেন হকিং তা’র জীবনের অনুপ্রেরণা। মনোবল, প্রবল ইচ্ছাশাক্তি, ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এখন দেশসেরা একজন ফ্রিল্যান্সার।
২০১৬ সালে অন্যের সহযোগিতা, নিজের প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো টাকা ও ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে তিনি একটি ল্যাপটপ কেনেন। এরপর ইন্টারনেটে গুগল ও ই’উটিউব ঘেঁটে বিভিন্ন কাজ শিখে নেন। ২০১৭ সা’লে ফেসবুকের মাধ্যমে অনলাইন মার্কেটে ফাইবারে গিগ খুলে কাজ খুঁজতে থাকেন।
ক’দিনের মধ্যে ৫ ডলারের একটি কাজ পেয়ে যান। অল্প সময়ের মধ্যে সফলভাবে কাজটি করার জন্য বা’য়ার তাকে আরো ১০ ডলার বোনাস দেন। এরপর থে’কে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ফাহিমকে। প্রথমে ব্যানার ও বিজেনস কার্ড দিয়ে কাজ শুরু করলেও তিনি এখন সব ধরনের কাজই করে থাকেন।
কাজের দক্ষতার কারণে এখন ফাইবারে লেভেল টুতে টপ রেটেড আপওয়ার্কার তিনি। বর্তমানে বি’শ্বের ৩০ থেকে ৩৫টি দেশের বায়ারদের সঙ্গে কর’ছেন। অর্ডার এতো বেশি যে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও কাজ শেষ হবে না।
ফ্রিল্যন্সার হিসেবে কাজ করে গত ৪ বছর ধরে ফাহিম মাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা করে আয় করছেন। তার উপার্জনে পরিবারে স্বচ্ছলতা এসছে। বো’নের লেখাপড়া চলছে। আগে ভাড়া বাসায় থা’কলেও এখন শহরের মোল্লা পড়ায় জমি কিনে বাড়ি করেছেন।
বর্তমানে সেই বাড়িতে ফাহিম পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। ফহিমও তার উন্নত চিকিৎসার জন্য স’রকারের প্রতি সহায়তা কমনা করছেন।সদর উ’পজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ঝুমুর সরকার জানান, তার অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ফাহিমকে আগেও সহায়তা করা হয়েছে।
আ’গামীতেও প্র’য়োজনীয় সকল প্রকার সহোযোগিতা করা হবে। কারণ ফাহিম প্রতিবন্ধকতা জয় করে মেধা অদম্য শক্তি কাজে লাগিয়ে আজ সফলতা অর্জন করেছেন। সামাজের বেকার যুকদের জন্য তিনি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারেন।