দেশে ৮ মার্চ প্রথম ক’রোনা শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ জন এবং মা’রা গেছেন ৩ হাজার ৬৫৭ জন।
অর্থাৎ দেশে এখনও এক লাখ ১৩ হাজার ৯৪২ জন ক’রোনা আক্রান্ত রো’গী আছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া আগস্টের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ২ হাজার ৯৯৬ জন। এছাড়া এখন পর্যন্ত আগস্ট মা’সে শনাক্ত ৩ হাজার অতিক্রম করেনি।
তবে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হারে তেমন কোনও অ’বনতি নেই। টেস্ট যে পরিমাণেই হোক, শনাক্তের হার ২০-২৫ শ’তাংশের মধ্যেই আছে। গত সাত দিনে করোনায় মারা গেছেন ২৫৮ জন। এই সাত দিনে গড় মৃত্যু ছিল ৩৭ জন। গত সাত দিনে শনাক্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৯২৫ জন এবং গড়ে ২ হাজার ৪১৮ জন শনাক্ত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক’রোনা সহসাই চলে যাবে এটা ধারণা করা ভুল হবে। আবার কেউ কেউ মনে ক’রছেন, যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এক মাসের মধ্যে ক’রোনার সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক এবং জ’নস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, ‘ক’রোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে বিশ্বের অনেক দেশের কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না।
তার পরেও তারা এমন ব্যবস্থা নিলো যে অতি দ্রুত সময়ে এটি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসলো। ইউরোপের দেশগুলোতে অনেক মৃ’ত্যু হয়েছে। তারপরেও কিন্তু তা’রা ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং সংক্রমণকে মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া নির্দেশনা কয়েকটি দেশ অ’নুসরণ করেছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করে তারা খুব দ্রুত সময়ে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে। কিছু দেশ যেমন– যুক্তরাষ্ট্র, ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশ, ভারত এই দেশগুলো কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না করার ফলে একটি চরম অবস্থার মধ্যে চলে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দুটি গ্রুপের মধ্যে এক গ্রুপ সফল হয়েছে, আরেক গ্রুপ পারেনি। তাদের সঙ্গে মেলাতে গেলে দেখা যায়, যারা সফল হতে পারেনি তা’দের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈশিষ্ট্যগুলো মিলে যায়। যেসব দেশ সফল হয়েছে তারা ক’রোনা রোগী শনাক্ত এবং অবাধ চলাচলের নিয়ন্ত্রণের জায়গা নিশ্চিত করে সফল হয়েছে।
বাইরে বের না হতে দেওয়া, মাস্ক পরার বিষয়গুলো কয়েকটি দেশ জাতীয়ভাবে পালন করেছে। এ’গুলোর কোনও একটিও আমরা ঠিকমতো করতে পা’রিনি। মন্ত্রী মহোদয় যেভাবে বললেন সে অনুযায়ী গত এক মাসে কিংবা তারও আগে বড় দাগে কোনও কাজ কি করা হয়েছে?
আমার ধারণা, ডিজি পরিবর্তন, সচিব পরিবর্তন, নানা পরিচালকের পরিবর্তনের পরে মনে হচ্ছে ওই এলাকা ঝিমিয়ে গেছে।’তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে থাকি তাহলে করোনা না থাকার বিষয়টি একমাত্র “ঐশী” বাণী হতে পারে। সেক্ষেত্রে ব’লা যায়, আমার কাছে একটা বাণী এসেছে, “ক’রোনা বাংলাদেশে থাকবে না” একমাত্র এটা হতে পারে।
কিন্তু যুক্তি, বিবেচনা, বৈজ্ঞানিকভাবে দেখা যায়, ভা’ইরাসটির সংক্রমণ করার সক্ষমতা যদি কোনও কা’রণে কমে যায়, একমাত্র তাহলেই এটি সম্ভব। কিন্তু সেটা হওয়ার সম্ভাবনা এজন্যই কম যে, এটি একটি বৈশ্বিক শক্তি।
এটাকে বহু সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়েছে, অনেক আবহাওয়ায় টিকে থাকতে হয়েছে। সুতরাং এটি কোনও সহজ ভা’ইরাস নয়। এমন ভাবার কোনও কারণ নে’ই যে আগামীকাল এটি একটি সাদামাটা ভাইরাসে রূপান্তরিত হবে।
এটা হওয়ার কথা না। বিজ্ঞান তা বলে না। সহসা সংক্রমণ কমে যাবে– বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে এটার সঙ্গে আমরা একমত হতে পারি না।’রোনা বিষয়ক স’রকারের পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির স’দস্য ডা. আবু জামিল ফয়সালের মতে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এরকম কথা বলে আমরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছি। আমাদের যে কাজ এখনও শেষ হয়নি, সেটির মধ্যে এক ধরনের ঢিলেমি চলে আসছে। ক’রোনা চলে যাবে এটা মনে করা এ’কেবারেই ভুল। তিনি কীভাবে বললেন এটা আমি জানি না। গতকালকেও (শনিবার) ৩৪ জন মারা গেছে করোনায়, সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ৬৬৪ জন। সংক্রমণের হারও অনেক বেশি।
আমাদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে না বলে আ’মরা জানতে পারছি না যে ছোট শহরগুলোতে এখন সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
সুতরাং আমরা যদি মনে করি, এখন আর কোনও কিছু করতে হবে না, এটা মারাত্মক ভুল।’সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ক’রোনা সহসাই যাবে কিনা এটা রোগতাত্ত্বিক বি’শ্লেষণ করে বলা যাবে। সেরকম পরিস্থিতি তো দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয় আসলে স’রকারের রোগতাত্ত্বিক অবস্থান থেকে বলেননি বোধহয়।
তিনি একটি অন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাইকে হয়তো আ’শ্বাস দেওয়ার জন্য বলেছেন। করোনা একসময় যা’বে, তবে সেটা কখন তা বিশ্লেষণ ছাড়া বলা যাবে না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাধারণভাবেই হয়তো বলেছেন।
তবে ক’রোনা নিয়ন্ত্রণ আগামী এক মাসের মধ্যে সম্ভব, যদি সারাদেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করে ঘরে ঘরে শ’নাক্তের ব্যবস্থা করা যায়, প্রয়োজন অনুযায়ী পর্যাপ্ত আইসোলেশন করা যায়, আক্রান্তদের সঙ্গের লোকদের কোয়ারেন্টিন করা যায়, স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায়।’