বমির সাথে রক্ত যাওয়াকে মেডিকেল ইমারজেন্সী হিসেবে দেখা হয়। কারন এর ঝুঁকি অনেক বেশি। যতোটা রক্ত বমির সাথে যায় সেটা দেখা গেলেও অনেক সময় সেই রক্তক্ষরণ চলতে থাকে এবং তা মলের সাথে বের হয়। তখন তাকে ‘মেলেনা’ বলা হয়।বমির সঙ্গে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্তবমি বা হেমাটোমেসিস। সচরাচর পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার কারণে এমনটি হয়। বমির সঙ্গে তাজা লাল রক্ত যেতে পারে। রং হতে পারে কফির মতো। আবার ভেতরে প্রচুর রক্তপাত হলে ছোট ছোট জমাট রক্তদলা বমির সঙ্গে আসতে পারে।
* পেপটিক আলসার (৩৫-৫০%),
* * অন্ত্রনালির নিচের দিকের রক্তবাহী নালি বা ভ্যারিক্স ফেটে গিয়ে (লিভার সিরোসিস রোগে হয়, ১০%),
* অন্ত্রনালি, পাকস্থলী ঝিল্লি ক্ষয় হয়ে (১০%),
* * অ্যাসপিরিন বা ব্যাথা নাশক ওষুধ (বিশেষ করে খালিপেটে খেলে), মদ্যপান (২০%),
* পাকস্থলীর ক্যান্সার (২%),
* * রক্তের রোগ, রক্তের ক্যান্সার, হিমোফিলিয়া।
আমাদের দেশে পাকস্থলীর আলসার ও ব্যাথা নাশক বড়ি সেবনে এই রক্তবমি প্রধানত হয়ে থাকে।
অনেকক্ষণ ধরে পেটে ব্যথার পর বমি করতে করতে রক্তবমি শুরু হতে পারে। এ পর্যায়ে রক্ত কম পরিমাণে বের হলে তেমন কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে বেশি রক্তবমি হলে দুর্বলতা, অস্বস্তিবোধ, শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ঘেমে যাওয়া, ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়া এমন কি শকেও চলে যেতে পারে। রোগী অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারে।
* এন্ডোসকপি,
* * পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম,
* লিভার ফাংশন টেস্ট,
* * সিবিসি, ব্লাড গ্রুপিং,
* ব্লিডিং টাইম, ক্লটিং টাইম ইত্যাদি।
* বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি,
* * ক্যান্সার এর রোগী,
* লিভার সিরোসিস বা কিডনি ফেইলিওর আছে,
* * আগেও এমন রক্তবমি হয়েছে,
* হৃৎপিণ্ডের অসুখ বা ডায়াবেটিস আছে।
হঠাৎ রক্তবমি শুরু হলে কি করবেনঃ-
* ঠাণ্ডা তরল খাবার পরিমাণমতো যেমন ঠাণ্ডা দুধ পান করতে হবে, গরম ও শক্ত খাবার যেমন ভাত-রুটি খাওয়ানো যাবে না।
* * গলা, বুক জ্বলে যাওয়ার অনুভূতি হলে কয়েক চামচ অ্যান্টাসিড সাসপেনশন খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সাসপেনশন খাওয়ালে আবার বমি শুরু হয়।
* রোগীকে শোয়ানোর সময় পা একটু ওপরে রাখলে ভালো হয়। রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রে বা চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
রক্তবমি হয়ে রক্তের হিমোগ্লোবিন ৭ গ্রামের নিচে নেমে গেলে দ্রুত ব্লাড ট্রান্সফিউশনের ব্যবস্থা করতে হবে। রক্ত না পাওয়া গেলে আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইন দিয়ে রাখতে হবে যাতে রোগী শকে চলে না যায়। লিভার সিরোসিস রোগীদের ভ্যারিসিয়াল ব্লিডিং এর ক্ষেত্রে দ্রুত ইভিএল করে রক্তক্ষরণ বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে।
*পেটে আলসার যাতে না হয়, সে জন্য আগেভাগেই খাবারের প্রকার ও সময়ে শৃঙ্খলা রক্ষা করা। মদ্যপান, ধূমপানে বিরত থাকা। অ্যাসপিরিন/ পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে নিয়ম মতো ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
* * হেপাটাইটিস বা অন্যান্য লিভারের রোগ, যা দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ সৃষ্টি করতে পারে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, রক্ত দ্রব্যাদি ব্যবহারে সতর্ক থাকা, অ্যালকোহল পানে বিরত থাকা ইত্যাদি। তবে কোনো কারণে হেপাটাইটিস হয়ে গেলে তার যথাযথ চিকিৎসা যত্ন সহকারে গ্রহণ করা।
* রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাজনিত রোগ বা সাময়িক ব্যথাজনিত রোগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যথার ওষুধ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ অবশ্যই ভরা পেটে খাওয়া বা খুব বেশি এসিডিটি হলে অমিপ্রাজল জাতীয় ওষুধ সেবন করা।
* * পাকস্থলীতে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে বংশগত প্রভাব থাকে। সেসব ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি এড়িয়ে চলা; যেমন পেটে আলসার থাকলে নিয়মকানুন মেনে চলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান ও অ্যালকোহল সেবনে বিরত থাকা ইত্যাদি। তথ্য সূত্রঃ- ইন্টারনেট
ডাঃ মুহাম্মদ আবিদুর রহমান ভূঞা
লিভার, পরিপাকতন্ত্র ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমডি (হেপাটোলজী
আরপি মেডিসিন, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জ।