লোহাজুড়ি ইউনিয়নের হতদরিদ্র রবিদাস সম্প্রদায়ের পিতৃহীন নিপা রানী দাসের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু তাদের প্রথা অনুযায়ী বিয়েতে বরকে যৌতুক প্রদান এবং অনুষ্ঠানের খাবার সহ আনুষাঙ্গিক খরচ মেটানোর কোন টাকাই নেই তাদের। দুই বছর আগে প্যারালাইসিসের আক্রান্ত হয়ে পিতা নরেশ চন্দ্র রবিদাস মারা যান। তার স্ত্রী আরতি রানী দাস (৩৫) রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন। তাদের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ে দীপা রানী দাসের বিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ। ছোট মেয়ে সিমা রানী দাস ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। বড় ছেলে আনন্দ রবিদাস (১৩) সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে সেলুনে কাজ করে। ছোট ছেলে সঞ্চয় রবিদাস (৮) ২য় শ্রেণীর ছাত্র। লেখাপড়ার ফাঁকে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ লোহাজুড়ি গ্রামের রবিদাস সম্প্রদায়ের সহায়সম্বলহীন পরিবারটির মাথা গুজার জন্য ছোট্ট একটি ঘর। যা থাকার জন্য অনুপযোগী। এই অবস্থায় বিয়ে ঠিক হয় নিপা রানী দাসের। বোনের বিয়ে আয়োজন মেটাতে ছোট দুই ভাই হাত পাতেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। কিছু সহায়তা মিললেও প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। সংবাদ মাধ্যমে তাদের দুঃখ দুর্দশার খবর পেয়ে পুলিশে অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার মোঃ মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার) এর মাধ্যমে মঙ্গলবার (১ মার্চ) অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের দেয়া সাহায্যের এক লাখ দশ হাজার টাকা তুলে দেন এই পরিবারটির হাতে। সাহায্য পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান আরতি রানীদাস। তিনি বলেন, সাক্ষাৎ ভগবানে দেহা পাইছি। সাহায্য ছাড়া বে দেওন আমরার সাধ্য আছিন না।
পুলিশ সুপার বলেন, সমাজে এমন পরিবার অনেক রয়েছে। ধনাঢ্য ব্যক্তিরা এভাবে এগিয়ে এলে অসহায়দের দুঃখ দুর্দশা অনেকাংশে লাগব হবে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এই অসহায় পরিবারের মেয়েটির বিয়ের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশন) মোঃ নূরে আলম, সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব সার্কেল) রেজুয়ান দিপু, কটিয়াদি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন, লোহাজুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দার মারোয়া, লোহাজুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, কটিয়াদি আব্দুল হেকিম কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর জোয়ারদারসহ আরতি দাসের পরিবার ইউনিয়নের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।