কিশোরগঞ্জ সদরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দার তীরে প্রায় ১০ শতাংশ জমিতে অবস্থিত পাগলা মসজিদ। এ আলোচিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে ১৫ বস্তায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গেছে।
জেলার ঐতিহাসিক এ মসজিদটিতে মোট আটটি দানবাক্স রয়েছে। প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর এই বাক্সগুলো খোলা হয়। তবে করোনার মহামারী শুরুর পর থেকে এ মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল চার মাস পর পর। করোনার পর এবার তিন মাস ১ দিন পর দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছে।
শনিবার ১ অক্টোবর সকাল পৌনে ৯ টার দিকে দানবাক্সগুলো খোলা হয়। আটটি দানবাক্সে ৩ মাসে এবার জমা পড়েছে ১৫ বস্তা টাকা।
দানবাক্স খোলা কমিটির আহবায়ক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আটটি দানবাক্স খুলে ১৫ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে।
প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এখন চলছে টাকা গণনার কাজ। এই কাজে মাদ্রাসার ১১২ জন ছাত্র, ব্যাংকের ৫০ জন স্টাফ, মসজিদ কমিটির ৩৪ জন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১০ জন সদস্য অংশ নিয়েছেন।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা শওকত উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, পনের বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। এখন চলছে গণনা। গণনার শেষে কী পরিমাণ টাকা, সোনা, রুপা বা বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে তা বলা যাবে।
এর আগে সর্বশেষ গত ২ জুলাই দানবাক্সগুলো খোলা হয়েছিল। তখন ৩ মাস ২০ দিনে এই দানবাক্সগুলো জমা পড়েছিল ১৬ বস্তা টাকা। সেই বস্তাগুলো মসজিদের দ্বিতীয় তলার মেঝেতে ঢেলে দিনভর গণনা শেষে ১৬টি বস্তায় পাওয়া গেছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। এ ছাড়া জমা পড়েছিল বৈদেশিক মুদ্রা, সোনা ও রুপা।
টাকা ছাড়াও মসজিদে নিয়মিত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অসংখ্য মানুষ।
মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান জানান, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অন্য ধর্মের মানুষ এসে দান করছে এই মসজিদে। যারা দান করতে আসেন তারা বলে থাকেন, এখানে দান করার পরে নাকি তাদের আশা পূরণ হয়েছে। আর এ বিষয়টির কারণেই এখানে দান করে থাকেন তারা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, এই মসজিদের টাকা তেমন একটা খরচ হয়না। সামান্য কিছু ব্যয় হয় ঈমাম, মুয়াজ্জিনের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবকদেরকে সহায়তা প্রদান করা, আর ছোটখাট মেরামতের জন্য। বাকি টাকা ব্যাংকে অক্ষত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, আন্তর্জাতিক মসজিদ এবং ইসলামিক কমপওয়া হয়েছে। তা তৈরিতে পরামর্শক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, ইতিমধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দিয়েছেন। তা মূল্যায়ন হয়েছে এখন তাদের কাছে আর্থিক প্রপোজাল চাওয়া হবে। এই পরামর্শকের মাধ্যমেই ঠিকাদার নিয়োগ এবং সুপারভিশনের কাজ করা হবে।
দানবাক্স খোলা দেখতে বিভিন্ন এলাকা হতে উৎসুক মানুষজন ভিড় করেছে মসজিদ কমপ্লেক্স এর বাহিরে। যদিও দানবাক্স খোলা এবং গণনার জায়গাটিতে সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষেধ করেছে প্রশাসন।